কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতে অর্থায়ন করবে না এডিবি: নতুন জ্বালানি নীতি অনুমোদন
ইবি ডেস্ক:
নতুন করে আর কোনো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে অর্থায়ন করবে না এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। চলতি বছরের ১৩ই অক্টোবর জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সংস্থাটি সদস্যভুক্ত দেশগুলোর জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলারের নতুন তহবিল ঘোষণা করেছিল। এই তহবিল অনুমোদন দিয়েছে সংস্থাটি। একই সাথে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক নতুন জ্বালানি নীতি অনুমোদন দিয়েছে।
এডিবির সভাপতি মাসাতসুগু আসাকাওয়া বলেন, এডিবি নতুন কোনো কয়লাভিত্ত্বিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে আর অর্থায়ন করবে না। অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিদ্যুতের ভূমিকা মুখ্য। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন নীতি জলবায়ু ও পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। এডিবির নতুন জ্বালানি নীতি আমাদের উন্নয়নশীল সদস্য দেশগুলোকে নির্ভরযোগ্য, সাশ্রয়ীমূল্যের ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি দিতে সহায়তা করবে।
জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্বজুড়ে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব মোকাবেলায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানানো হয়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কার্বন নিঃসরণ কমাতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
নতুন জ্বালানি নীতিতে প্রয়োজনে বাণিজ্যিক বিনিয়োগ কাজে লাগাতে সবচেয়ে কঠিন জ্বালানি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এডিবি’র সম্পদকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। জ্বালানি নীতিতে সারাবিশ্বে সবার জন্য কমখরচে জ্বালানি নিশ্চয়তার কথা বলা হয়েছে।
২০১৮ সালে এডিবি জলবায়ু খাতে ৭৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করার ঘোষণা দিয়েছিল। যা পরবর্তী সময়ে বাড়িয়ে ৮০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হয়। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী এই অর্থ বাড়িয়ে ১০০ বিলিয়ন ডলার করা হয়েছে।
আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এই ১০০ বিলিয়ন ডলারের এই তহবিল সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে পৌঁছে দেয়া হবে। জলবায়ু খাতে ২০১৯ থেকে এই তহবিল বিতরণ শুরু হয়েছে।
উন্নয়নশীল এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরজুড়ে জ্বালানি শক্তির ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। তারপরও এই অঞ্চলের প্রায় ৩৫ কোটি মানুষের কাছে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই। এছাড়া ১৫ কোটি মানুষ এখনও বিদ্যুৎ ব্যবহার থেকে বঞ্চিত।
ক্রমাগত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও নগরায়নের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসহ সাশ্রয়ী এবং নির্ভরযোগ্য জ্বালানি ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। এই অঞ্চলের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা প্রতিবছর প্রায় ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। ২০১৯ সালে সালে তিন হাজার ৩৮৬ গিগাওয়াট থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ছয় হাজার ১১৩ গিগাওয়াট হতে পারে। ২০৩০ সালে আগের দশকের তুলনায় জ্বালানি ব্যবহার দ্বিগুণ।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং নগরায়ন অব্যাহত রাখতে যথেষ্ট অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসহ সাশ্রয়ী ও নির্ভরযোগ্য জ্বালানি ব্যবস্থা উন্নয়নের প্রয়োজন হবে। এ জন্য, আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার পরিস্থিতি থেকে প্রতীয়মান হয় যে এ অঞ্চলে স্থাপিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা প্রতি বছরে ৭% বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৯ সালের ৩,৩৮৬ গিগাওয়াট থেকে ২০৩০ সাল নাগাদ ৬,১১৩ গিগাওয়াটে উন্নীত হতে পারে।
এই অঞ্চলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে বিনিয়োগ ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতি বছর ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলারে পৗঁছতে পারে, যা আগের দশকের তুলনায় দ্বিগুণ।
এডিবির ২০২১ জ্বালানি নীতি এই অঞ্চলে জ্বালানি প্রবেশাধিকার ও সুরক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশগত স্থায়িত্ব উভয় দিক থেকে এই পরিবর্তনগুলোর মোকাবেলায় পদক্ষেপ নিতে সহায়তায় এডিবিকে নির্দেশনা দেবে।
এডিবি ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৪২২ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থায়নে এ অঞ্চলের জ্বালানি খাতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে কিন্তু এই অঞ্চলের জ্বালানি অর্থায়নে আরও বেশি গতিশীলতা প্রয়োজন।