এখনো আবহাওয়ার সাথে লোডশেডিংয়ের সম্পর্ক মেনে নেয়া যায় না

সম্পাদকীয়:

নানা কারণ যোগ হয়ে বেড়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে না হলেও গ্রাম বা মফস্বল শহরগুলোতে এখন ভালোই লোডশেডিং হচ্ছে।
চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে উৎপাদন করা যাচ্ছে না। কিছুদিন আগে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে কিছুক্ষণের জন্য সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। তারপরও লোডশেডিং ছিল। এরপর তাপমাত্রা কমে গেলে লোডশেডিংও কমে গিয়েছিল। এখন আবার লোডশেডিং এর মাত্রা বেড়েছে।
এত এত বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করার পরও লোডশেডিং থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। গরম বাড়ছে আর বিদ্যুতের চাহিদা বাড়া শুরু হয়েছে।
জ্বালানিসংকট, বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকা এবং কারিগরি সীমাবদ্ধতার কারণে চাহিদার সমান উৎপাদন করা যায় না বলে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। এই সমস্যা অনেকদিন থেকেই। বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে তো জ্বালানি নেই। আবার জ্বালানি আছে তো বিদ্যুৎকেন্দ্রর যন্ত্র নষ্ট। মেরামতে পাঠানো হয়েছে। এসব সমস্যা যেন পিছু ছাড়ছে না। কয়লার অভাবে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র আবার বন্ধ হয়েছে। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের উপক্রম।
পূর্বাভাস বলছে, আগামী কয়েকদিন তাপমাত্রা আবার বাড়বে। কিছু এলাকায় তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটা আরও বাড়বে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়েছে। তারমানে বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়বে। আর চাহিদা বাড়া মানে লোডশেডিং। লোডশেডিং বেড়ে যাওয়া।
তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে আর কত দিন চলবে? এত বিনিয়োগ করে, এত বিদ্যুৎকেন্দ্র করেও পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ দেয়া যাচ্ছে না। এখনো শিল্প উদ্যোক্তারা গ্রিডের বিদ্যুতে নির্ভর করে না। বিদ্যুতের মূল প্রয়োজনীয় গ্রাহক শিল্প। আর সেই শিল্প গ্রাহকরাই গ্রিড বিদ্যুতে আস্থা রাখতে পারছে না। তারমানে টেকসই আস্থার বিদ্যুৎ উৎপাদন এখনো শুরু হয়নি।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এর হিসাবে, ৬ই মে সর্বোচ্চ চাহিদার সময় অর্থাৎ সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১২ হাজার ৯৩৮ মেগাওয়াট। আর ঐ দিন দিনের বেলা ১০ হাজার ৬৭৫ মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদন সক্ষম বিদ্যুতের পরিমান দেখানো হচ্ছে ২২ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াট। অর্থাৎ সরলে প্রায় ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসে আছে।
এই গরম আর সেচ মৌসুমে ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা আছে বলে জানানো হয়েছে। চাহিদা যদি আরও দুই হাজার মেগাওয়াট কমিয়েও ধরা হয় অর্থাৎ ১৬ হাজার মেগাওয়াট তাতেও তিন হাজার মেগাওয়াটের বেশি ঘাটতি থাকছে এখন।
গরম যখন আরও বাড়বে তখন, দিন আর রাতের মধ্যে বিদ্যুতের চাহিদার পার্থক্য কমে যাবে। অর্থাৎ দিনের বেলাও চাহিদা বাড়বে। তখন ঘাটতি আরও বাড়বে। কারণ সর্বোচ্চ যে ১৫ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করা হয়েছে তা মাত্র এক ঘণ্টার জন্য। কিন্তু চাহিদা তো আর এক ঘণ্টার জন্য বাড়ে না। তাই লোডশেডিং সঙ্গী।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে এখন বড় অংশ আমদানি করা জ্বালানির উপর নির্ভরশীল। আর আমদানি মানেই ডলার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে যে ডলার সংকট শুরু হয়েছে তা এখনো চলছে। যদিও কিছুদিন আগেই এই সমস্যা সমাধানের উদ্যোগের কথা বলেছিলেন উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহি চৌধুরি। তিনি বলেছিলেন, ডলারের সমস্যা আমরা ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠছি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ডলারের অভাবে কয়লা আনা যাচ্ছে না। তাহলে সমস্যা মিটলো কোথায়?
এটা ঠিক, যে আগের মত অনেকক্ষণ লোডশেডিং হচ্ছে না। কিন্তু হচ্ছে তো। লোডশেডিং বন্ধ করতে হবে। আর আস্থার বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। শীত আর গরমের উপর নির্ভরতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এতবছর পার করার পরও আবহাওয়ার সাথে লোডশেডিং এর সম্পর্ক থাকা মেনে নেয়া যায় না।