উন্নত ব্যবস্থাপনার কারণে ভারতে কয়লা বিদ্যুতের দাম কম

আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত ব্যবস্থাপনার কারণে ভারতের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের দাম কম। বর্তমানে আমদানিকৃত কয়লা দিয়ে প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট ঘণ্টা) বিদ্যুৎ উৎপাদনে তারা ব্যয় করে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ থেকে ৪ টাকা।
ভারতের ছত্রিশগড় ও মহারাষ্ট্রের দুইটি বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শনের পর প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।দূষণ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কার্বন ক্রেডিট পায় এই দুই কেন্দ্র।
তারা জানান, উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা, জমি অধিগ্রহণের সুবিধা এবং সহজেই অর্থায়ন করা যাচ্ছে বলে ভারতের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের দাম কম পড়ছে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শন করে দেখা গেছে, সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে কয়লা বহন করা হচ্ছে। খনি থেকে কিংবা বন্দর থেকে ট্রেনে করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আনা হচ্ছে। সেখানে নির্দিস্ট স্থানে একটি চলন্ত বেল্টে কয়লা ফেলা হচ্ছে। কয়লার বেল্টটি সম্পূর্ণ ঢাকা। কয়লা পুড়ে তাপ তৈরীর পর যে ছাই তৈরী হচ্ছে তাও বন্ধ একটি বেল্টের মধ্যদিয়ে এসে সংরক্ষিত হচ্ছে। ছাইগুলো পানির সাথে মিসিয়ে মন্ড বাসিয়ে নতুন কোন শিল্পের কাচামাল হিসেবে পাঠানো হচ্ছে। খুব সামান্য কিছু ছাই চিমনি দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। যার পরিমান মোট ছাইয়ের দশমিক ০৩ ভাগ।
ভারতের এই দুটি বড় কেন্দ্রের সঙ্গেই রেল লাইন স্থাপন করা হয়েছে। ফলে রেলের মাধ্যমে সহজেই কয়লা পরিবহণ করা যায়। কয়লভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ক্ষেত্রে ভারত তাদের নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে বলে পরিবেশ দুষণ হচ্ছে না বললেই চলে। প্রকৌশলীরা জানান, কয়লা পুড়ানো মানেই কার্বন নিঃসরণ হওয়া। কার্বন নিঃসরণ কমানো সম্ভব নয়। যে পরিমান কয়লা পোড়ানো হবে সেই পরিমান কার্বন নিঃসরণ হবেই। সে জন্য কম কয়লা দিয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। আর ছাইয়ের কারণে যে পরিবেশ দূষণ তা কমাতে চিমনির উচ্চতা অনেক বেশি রাখা হয়েছে। কম ছাই যাবে বের হয় সে দিকেও খেয়াল রাখা হয়েছে।

কার্বণ দূষণ কমাতে পারলে আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিল থেকে কার্বণ ক্রেডিট নামে একটি অর্থ পাওয়া যায়। উন্নত দেশগুলো যারা শিল্পের মাধ্যমে পরিবেশের বেশি দূষণ করছে তারা মিলে এ তহবিল গঠন করেছে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দূষণ কমনোর জন্য এই দুই কেন্দ্রই কার্বন ক্রেডিট পায় বলে জানিয়েছে প্রকৌশলীরা।
এনটিপিসি সিপাত সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক ভি বি ফাদনাভিজ সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শনে যাওয়া সাংবাদিকদের বলেন, এখানে কয়লার মজুদ রয়েছে, যার ওপর ভিত্তি করে কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। দেশীয় কয়লার কারণেই বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কম হয়। তিনি বলেন, দাম নির্ভর করে কেন্দ্রে কী মানের কয়লা ব্যবহার করা হচ্ছে এবং কয়লা আমদানি করা হচ্ছে নাকি দেশের খনি থেকে আনা হচ্ছে- তার উপর। বিদেশ থেকে আমদানি করলে উৎপাদন খরচ কিছুটা বেশি হয় বলে তিনি জানান।
পরিবেশ দুষণের বিষয়ে ভারতের তিরোদা বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্টেশন হেড চৈতন্য প্রসাদ সাহা বলেন, সামগ্রিক ক্ষতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখে কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা গেলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। সে কাজ ভালোভাবে করছি। মহারাষ্ট্রের পরিবেশ অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণও রয়েছে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনার ওপর।
ভারতের স্থাপিত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা দুই লাখ ৫৩ হাজার ৩৮৯ মেগাওয়াট। এর মধ্যে কয়লা দিয়েই উৎপাদন করা হচ্ছে এক লাখ ৫২ হাজার ৩১০ মেগাওয়াট। আর গ্যাস দিয়ে উৎপাদন করা হচ্ছে মাত্র নয় ভাগ। যার পরিমান ২২ হাজার ৬০৮ মেগাওয়াট। তেল দিয়ে উৎপাদন হচ্ছে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট। পানি থেকে ৪০ হাজার ৭৯৯ এবং পরমানু থেকে চার হাজার ৭৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রকার নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ৩১ হাজার ৬৯২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
ভারতের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দু’টি ঘুরে যে উন্নত ছাই ব্যবস্থাপনা দেখা গেছে তা উল্লেখ করার মতো। কেন্দ্র থেকে যে ছাই হয় তার প্রায় ৯৭ দশমিক ০৩ শতাংশ ছাই তারা সংগ্রহ করে থাকে। এই ছাই ভারতসহ আশেপাশের দেশের সিমেন্ট কারখানাগুলোতে সরবরাহ করা হয়।